সূরা আল-হুমাযাহ (পাঠ ৮)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK
219
Summary

সূরা আল-হুমাযাহ:

সূরা আল-হুমাযাহ আল-কুরআনের ১০৪তম সূরা, যা পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে ৯টি আয়াত রয়েছে এবং এর নাম 'হুমাযাহ' শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ পিছনে বা সামনে নিন্দাকারী।

শব্দার্থ:

  • وَيْلٌ - দুর্ভোগ, ধ্বংস
  • هُمَزَةٍ - পশ্চাতে নিন্দাকারী
  • لمَزَةٍ - সম্মুখে নিন্দাকারী
  • مالا - মাল, ধনসম্পদ
  • يحسب - সে ধারণা করে
  • كلا - কখনো নয়
  • نار - আগুন

আলোচনা:

মহানবী (স.) ও মুমিনদের গিবত করার ফলে তিনটি ব্যক্তির ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে এই সূরা অবতীর্ণ হয়। সূরাটি দুই অংশে বিভক্ত: প্রথম অংশে তিনটি গুনাহ (কারণ) এবং দ্বিতীয় অংশে তাদের শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।

গুনাহ:

  • পশ্চাতে কারো নিন্দা (গিবত)
  • সমালোচনায় কারো নিন্দা
  • অর্থের প্রতিলিপ্সা

শাস্তি:

এই গুনাহের জন্য আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তাদের স্থান হবে হুতামাহ নামক জাহান্নামে, যেখানে আগুন তাদের অন্তর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পুড়াবে।

নৈতিক শিক্ষা:

সূরা আল-হুমাযাহ নৈতিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এটি দর্শায় গিবত, সম্মুখে নিন্দা ও অর্থলিপ্সা অনৈতিক কাজ। আমরা এই সকল দোষ থেকে মুক্ত থাকতে সচেষ্ট হব এবং আল্লাহর প্রদত্ত সম্পত্তির ওপর সন্তুষ্ট থেকে জীবনের প্রয়োজনমতো তা খরচ করব।

সূরা আল-হুমাযাহ আল-কুরআনের ১০৪ তম সূরা। এ সূরাটি পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৯টি। এ সূরার প্রথম আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হুমাযাহ অনুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
আমরা এ সূরাটি অর্থসহ মুখস্থ করব এবং এ সূরার শিক্ষা অনুযায়ী আমল করব।

শব্দার্থ

وَيْلٌ - দুর্ভোগ, ধ্বংস।

كل - প্রত্যেক, সকল।

هُمَزَةٍ - পশ্চাতে নিন্দাকারী।

لمَزَةٍ - সম্মুখে নিন্দাকারী।

جمع - সে জমা বা একত্র করেছে, সে সঞ্চয় করেছে।

مالا - মাল, ধনসম্পদ।

عددة - সে বারবার গণনা করেছে।

يحسب - সে ধারণা করে, সে হিসাব করে।

اخلدة - তা অমর করেছে, তা চিরস্থায়ী করেছে।

كلا - কখনো নয়।

الخطبة - হুতামাহ, একটি জাহান্নামের নাম।

ما ادريك - আপনি কি জানেন?

نار - আগুন।

تطلع - তা গ্রাস করবে।

الأفئدة - হৃদরসমূহ, অন্তরসমূহ।

مُؤْصَدَةٌ - পরিবেষ্টিত।

ممددة - দীর্ঘায়িত, প্রলম্বিত।

অনুবাদ

بسمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ الْمَزَةِ

১. দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পিছনে ও সামনে লোকের নিন্দা করে।

الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ

২. যে অর্থ জমায় ও তা বারবার গণনা করে।

يَحْسَبُ أَنَّ مَا لَهُ أَخْلَدَهُ

৩. সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে।

كَلَّا لَيُنبَذَنَ فِي الْحُطَمَةِ

৪. কখনো না; সে অবশ্যই হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে।

وَمَا أَدْرِيكَ مَا الْحُطَمَةُ

৫. আর আপনি কি জানেন, হুতামাহ কী?

نَارُ اللَّهِ الْمُوْقَدَةُ

৬. এটি আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন।

الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ

৭. যা অন্তরসমূহ গ্রাস করবে।

إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُوْصَدَةٌ

৮. নিশ্চয়ই এটি তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে।

في عمد ممددة

৯. দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।

শানে নুযুল
উমাইয়া ইবনু খালফ, ওলীদ ইবনু মুগিরা ও আখনাস ইবনু শুরায়ক মহানবি (স.) ও মুমিনদের গিবত করত এবং তাদের অর্থলিপ্সা ছিল প্রবল। তাদের এই অপকর্মের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ এই সূরা অবতীর্ণ করেন।

ব্যাখ্যা
সূরা আল-হুমাযাহকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম তিন আয়াত নিয়ে প্রথম অংশ এবং শেষ ছয়টি আয়াত নিয়ে দ্বিতীয় অংশ। প্রথম অংশে তিনটি জঘন্য গুনাহের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে এসব গুনাহের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

এ সুরায় বর্ণিত গুনাহ বা পাপ কাজগুলো হলো-
ক. পশ্চাতে বা গোপনে কারো নিন্দা করা। একে গিবতও বলা হয়। এটি অত্যন্ত খারাপ কাজ। আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনের অন্য আয়াতে গিবত করা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান বলে উল্লেখ করেছেন।
খ. সামনাসামনি কারো নিন্দা করা। গোপনে নিন্দা করার মতো এটাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এর ফলে মানুষ অপমানিত হয়। অনেক সময় মানুষের মধ্যে ঝগড়াফ্যাসাদ ও মারামারির সৃষ্টি হয়।
গ. ধনসম্পদ জমা করা ও বারবার তা গণনা করা। একে এক কথায় অর্থলিপ্সা বা আয়ের লোভ বলা যায়। ধনসম্পদের প্রতি লোভী হলে মানুষ নানা অবৈধ পথে উপার্জন করতে থাকে। সে কৃপণ হয়ে পড়ে। গরিব-দুঃখীদের অধিকার আদায় করে না। যাকাত, হজ ইত্যাদি ফরজ ইবাদতও পালন করে না। বরং সে সম্পদ জমা করতে থাকে এবং ধারণা করে যে, এসব ধনসম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে।
এ সূরার দ্বিতীয় অংশে উল্লিখিত তিনটি জঘন্য কাজের শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। গিবত, পরনিন্দা ও অর্থলিপ্সা তিনটিই খারাপ কাজ। এগুলো কবিরা গুনাহ। এজন্য আখিরাতে মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। অর্থ মানুষকে অমর করে রাখবে এ ধারণাও ঠিক নয়। বরং সকল মানুষকেই মরতে হবে। তারপর হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের হিসাব নেবেন। যারা দুনিয়াতে এ তিনটি জঘন্য কাজ করে আখিরাতে তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের স্থান হবে হুতামাহ নামক জাহান্নামে। হুতামাহর আগুনে ঐ সকল ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জ্বলবে। এমনকি তাদের হৃদয় বা অন্তরও ঐ আগুনে পুড়বে। কোনো কিছুই আগুনের গ্রাস থেকে রেহাই পাবে না।

নৈতিক শিক্ষা
সূরা আল-হুমাযাহ-এর নৈতিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তিনটি মারাত্মক গুনাহের বা পাপ কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো গিবত তথা পশ্চাতে বা গোপনে কারো নিন্দা করা, সামনাসামনি নিন্দা করা ও অর্থলিপ্সা। এ তিনটিই নীতিহীন কাজ, অনৈতিক কাজ। উত্তম চরিত্রবান লোক এসব কাজ করতে পারে না। বরং নীতিবান হতে হলে এসব দোষ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অতএব, আমরাও এসব দোষ থেকে বেঁচে থাকব। কখনো কারো নিন্দা করব না। আর অর্থের প্রতি লোভ করব না। বরং আল্লাহ তায়ালা যে ধনসম্পদ দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকব এবং প্রয়োজনমতো তা খরচ করব।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...